গ্রাম আদালতের মাধ্যমে হযরত আলী তার জমি পুনরায় ফিরে পায়
বিরোধের সারাংশঃ
কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা পাকুন্দিয়া। পাকুন্দিয়ারের একটি সুপরিচিতইউনিয়ন নারান্দী।নারান্দীইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের আঃ রশিদ এর ছেলে হযরত আলী।হযরত আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। হযরত আলীর বাব মারা যায় ২০০৫ সালে।হযরত আলীনিজে বাচাঁর জন্য কৃষি কাজ করে।মাঝে মাঝে কাচাঁ মালের ব্যবসা করে।ব্যবসাকরে তার সংসার চালায়। হযরত আলী আশা নিয়ে বেচেঁ আছেন। তার আশা জমিতে ভাল ফসলফলবে এবং সেই ফসল বিক্রি করে সংসারের উন্নয়নের কাজে লাগাবে।তাইতো বেচেঁথাকার জন্য কতই না কষ্ট করেন হযরত আলী। হযরত আলী এক কাঠা জমি পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন। অল্প জমিতে সে কঠোর পরিশ্রম করে।সংসারে সুখের জন্য সেকাচাঁ মালের ব্যবসাও করে। হযরত আলী আশা নিয়ে বসে আছে অল্প জমিতে ভাল ফসলহবে এবং সন্তানাদিগণকে লেখাপড়ার খরচ চালাবে ন্তিু সেই অল্প জায়গাতে নজর দেয়তারই বড় ভাই গোলাপ মিয়া। হযরত আলীর মনের আশাকে ধুলিসাৎ করে দেন তারি বড়ভাই গোলাপ মিয়া। হযরত আলীর এক কাঠা জায়গা , সেই জায়গার মধ্যে গোলাপ মিয়াদাবি করে তার ১ শতাংশ জমি। তাই জোড় পূর্বক ভাবে দখল করে। তাইতো ১ শতাংশ জমিনিয়ে হযরত আলী গোলাপ মিয়ার সাথে বিরোধ হয়্ এক শতাংশ জমির মূল্য ২৫,০০০/-(পচিঁশ হাজার)
পক্ষদ্বয়েরপরিচিতিঃ
আবেদনকারীঃহযরত আলী, পিতাঃ আঃ রাশিদ,মাতাঃ হাজেরা খাতুন, গ্রামঃ নারান্দী, ডাকঃপূব নারান্দী,ইউনিয়নঃ নারান্দী, উপজেলাঃ পাকুন্দিয়া,জেলাঃ কিশোরগঞ্জ। বয়সঃ ৪৫, পারিবারিক অবস্থাঃদুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তার আয়ের পথ কৃষি ও ব্যবসা। বাড়ীতে একটি টিনের ঘর আছে।
প্রতিবাদীঃগোলাপ মিয়া, পিতাঃ আঃ রাশিদ, মাতাঃ হাজেরাখাতুন, গ্রামঃ নারান্দী, ডাকঃপূব নারান্দী,ইউনিয়নঃ নারান্দী, উপজেলাঃ পাকুন্দিয়া,জেলাঃ কিশোরগঞ্জ।বয়সঃ৫২, পারিবারিক অবস্থাঃএক ছেলে ও দুই মেয়ে। আয়ের পথ কৃষি। বাড়িতে একটি টিনের ঘর আছে।
পারিবারিক সামাজিক অবস্থাঃহযরত আলীর পিতা থাকাকালিনঅবস্থায় এক কাঠা জমি হযরত আলীকে দিয়ে যান। তখন থেকেই হযরত আলী জমি ভোগ দখলকরে আসছেন। কৃষি ও ব্যবসা ছাড়া সংসারে আয়ের আর কোন পথ নেই। হযরত আলী একাইসংসারে খরচ বহন করেন। তাইতো হযরত আলী বেচেঁ থাকার জন্য কৃষি ও কৃষিরপাশাপাশি ব্যবসা করেন। এই ভাবে সংসারের খরচ বহন করেন। বাড়ীতে একটি টিনের ঘরআছে ও অল্প জমি রয়েছে। সেই জমিতেই চাষাবাদ করেন হযরত আলী। প্রতিবাদী গোলাপমিয়া পেশায় একজন কৃষক। নিজের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালায় এবংপাশাপাশি অন্যান্য কাজ করে।
বিরোধের প্রেক্ষাপটঃ
আবেদনকারী হযরত আলী একজন দরিদ্র অসহায় পুরুষ বটে। নিজে বাচাঁর জন্য কাজকরে। অল্প পুজিঁ নিয়ে আয় করা সম্ভব নয়। তাইতো ব্যবসার পুজিঁ বাড়ানোর জন্যহযরত আলী ব্যবসা ও কৃষি কাজে অত্যান্ত পরিশ্রম করেন। হযরত আলীর এক কাঠাসম্পতিতে কুমড়া,ধান,ভুট্টা ইত্যাদি চাষ করে।মরিচ ফসল তোলার সময় প্রতিবাদীগোলাপ মিয়া বাধাঁ দেয়। এই জমি তার পিতার সম্পত্তি এই কথা বলে দাবি করে এবংদখল করেন। হযরত আলী গ্রামের মাতুব্বরের সহযোগিতা নেন।তাদের কথা গোলাপ মিয়াকর্নপাত করেনি। তাইতো হযরত আলী গ্রাম আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে ন্যায্যবিচারের আশায় বুক বাধেঁ। হযরত আলী অন্য কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে তারন্যায্য অধিকার ও এক শতাংশ জমি ফেরত পাওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম আদালতেরস্মরণাপন্ন হন।
গ্রাম আদালতে আগমনঃউঠান বৈঠকের মাধ্যমে হযরত আলীজানতে পারে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের কথা এবং সিবিও সদস্য ও মেম্বারেরসাথে কথা বলেও গ্রাম আদালতের কথা জানতে পারেন।
মামলার বিবরণঃ১১/০১/২০১৩ তারিখে হযরত আলী নারান্দী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন। গোলাপ মিয়াকে প্রতিবাদী করে একটি লিখিত আবেদনজমা দেন। মামলার ফি ৪/-(চার)টাকা প্রদান করেন। মামলা নং০৩/২০১৩, দাখিলের তারিখ১১/০১/২০১৩।হযরত আলী একটি দেওয়নী মামলা দায়ের করেন। ইউ.পি চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম খোকনমামলাটি যাচাই বাছাই করেন এবং রেজিষ্টার ভুক্ত করে প্রতিবাদীকেসমন প্রদান করতে বলেন।১৮/০১/২০১৩ তারিখ সকাল ১০.০০ঘটিকায় প্রতিবাদীকেইউনিয়ন পরিষদে হাজির হওয়ার জন্য সমন প্রদান করেন গ্রাম পুলিশ শাহাব উদ্দিন।
আদালতের বিচার প্রক্রিয়াঃ১৮/০১/২০১৩ ইং তারিখ সকাল১০.০০টায় আবেদনকারী ও প্রতিবাদী ০৭নং নারান্দীইউনিয়ন পরিষদে হাজির। ইউনিয়নপরিষদের হাজিরা শিটে হাজিরা গ্রহন করেন কোর্ট সহকারী মো:শাহজাহান। ১৮/০১/২০১৩ ইং তারিখে বাদী ও প্রতিবাদীকে প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশ দেনগ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম খোকন।আগামী ২৫/০১/২০১৩ ইংতারিখের মধ্যে নিজ নিজ পক্ষে প্রতিনিধিগনের নাম জমা দানের নির্দেশ প্রদানকরা হয়।আবেদনকারী উক্ত তারিখের মধ্যে তার পক্ষে অত্র ইউনিয়নের ০৭ওয়ার্ডেরমেম্বার জনাব মোঃইসলাম উদ্দিন এবং গন্যমান্য হিসাবে মোঃ আ:রাজ্জাক মনিকমনোনীত করেন।প্রতিবাদীও তার পক্ষে ০৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনাব মোঃরিটন মিয়াএবং পোড়াবাড়ীয়াগ্রামের গন্যমান্য হিসাবেরহিমাআক্তারকেপ্রতিনিধি মনোনয়ন করেন্। আবেদনকারী ও প্রতিবাদীর মনোনীত সদস্য এবং ইউ.পিচেয়ারম্যান জনাব মো:জহিরুল ইসলাম খোকনসাহেবের সমন্বয়ে ৫ (পাচঁ) সদস্যবিশিষ্ট গ্রাম আদালত গঠন করা হয়।মামলায় প্রতিবাদীর আপত্তি দাখিলের ধার্য্তারিখ আগামী ২৮/০২/২০১৩ ইং। প্রতিবাদী নির্ধারিত তারিখে কোন আপত্তি দাখিলকরেনি।মামলার আগামী ধার্য্ তারিখ ০৪/০২/২০১৩ ইং তারিখ।
গ্রাম আদালতে শুনানির বিবরণঃধার্য্ তারিখে আবেদনকারী ওপ্রতিবাদী হাজির। গ্রাম আদালতের ০৫( পাচঁ) জন বিচারক হাজির।বিচারকগণ উভয়েরকথা শুনে এবং তাদের জবানবন্দীর সারাংশ লিখে রাখেন।প্রতিবাদীর নিজের দোষস্বীকার করায় স্বাক্ষীর জবানবন্দী নেওয়া হয়নি।আদালতের সাক্ষ্য প্রমানেরভিত্তিতে আদালতের বিচারকগনের নিকট এটা প্রতিয়মান হয় যে, আবেদনকারীরপ্রতিবাদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য হওয়ায় আবেদনকারীর পক্ষে ৫:০সর্বসম্মতিক্রমে প্রকাশ্যে রায় ঘোষণা করন। আদালত দোতরফা সূত্রে রায় দেন।আবেদনকারীর পক্ষে মামলাটি ডিক্রি হয়। আদালত ০৭দিনের মধ্যে প্রাপ্য সম্পত্তিফেরত প্রদানের নির্দেশ দেন। অদ্য হতে ০৭দিনের মধ্যে প্রাপ্য জমি ফেরত দিতেব্যর্থ হইলে আবেদনকারী তার ডিক্রিকৃত প্রাপ্য জমি আইনের বর্নিত পন্থায়অত্র ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আদায় নিতে পারবেন। সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপ্রতিবাদী গোলাপ মিয়া গত ০৪/০২/২০১৩ ইং তারিখে চেয়ারম্যান সাহেবের মাধ্যমেসিদ্ধান্তকৃত পাওনা সম্পত্তি হযরত আলীকে বুঝিয়ে দেন। হযরত আলী তা বুঝে নেন।
মামলার ফলাফল ও প্রতিকারঃ অত্র মামলাটির সিদ্ধান্তদোতরফা সূত্রে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতেশাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম খোকন ০৪/০২/২০১৩ইং তারিখে ডিক্রিকৃত জমি হযরত আলীকে বুঝিয়ে দেন। পাওনা সম্পত্তি বুঝে পেয়ে হযরত আলী ডিক্রি রেজিষ্টারে স্বাক্ষর করেন।
পক্ষদ্বয়ের অনুভূতিঃজানা যায় যে, আবেদনকারী ডিক্রিকৃতসম্পত্তি আবাদ করে। হযরত আলী সংসারের কাজে উন্নতি করে।আবেদনকারী আরও জানায়যে, এত অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি হয় তাহা আমার জানা ছিলনা। আমাকে যদি থানায় যেতে হতো তাহলে আমার টাকা খরচ হতো অনেক বেশি এবংনিষ্পত্তি হতেও অনেক বিলম্ব হতো।তাই তো হযরত আলী মনে করে যে, গ্রাম আদালতইদরিদ্র,অসহায় মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে।গ্রাম আদালত সক্রিয় করণে যথেষ্টভূমিকা রাখবেন বলে জানান।প্রতিবাদী জানান যে, গ্রাম আদালত অত্যান্ত দ্রুতবিচার কার্য্ সম্পূর্ণ করে থাকে। এতে কোন প্রকার খরচ হয় না।তাই গ্রাম আদালতসক্রিয় করণে আমার চেষ্টা অব্যাহত রাখব।
মামলার ফলাফলঃআবেদনকারীর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কি উপকারঃআবেদনকারী সীমানায় ডিক্রিকৃত ১শতাংশ জমি ফিরে পেয়ে মনে করেন যে, তিনিগ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়েছেন।হযতর আলী জানান যদি অন্য কোনলোক এমন পরিস্থিতির শিকার হন তবে গ্রাম আদালতের স্মরণাপন্ন হতে পরামর্শদিবেন।বর্তমানে উভয় পক্ষ সামাজিকভাবে মিলেমিশে বসবাস করছেন।তাদের মধ্যেএখন আর কোন ঝগড়া বিবাদ নেই।
পক্ষদ্বয়ের মতামতঃআবেদনকারী ও প্রতিবাদী গ্রাম আলতেরমাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুবিধা সম্পর্কে জানান যে, ০৪(চার)টাকায় মামলানিষ্পত্তি আর কোন সংস্থা কর্তৃক হয় বলে আমাদের জানা নেই। প্রতিবাদী জানানযে, গ্রাম আদালতের বিচার পেতে কোন প্রকার খরচ হয় না এবং সময় অপচয় হয় না।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস